/ রামপুরা খালের নকশা /
২৪খবরবিডি: 'রাজধানীর বেগুনবাড়ি খাল, যা 'রামপুরা খাল' নামে পরিচিত। ঢাকার বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে এই খালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাতিরঝিল থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে বালু নদে পতিত হয়েছে রামপুরা খাল। কিন্তু উপর্যুপরি বর্জ্য নিক্ষেপ এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে খালের পানি দূষিত হয়ে পড়ছে।'
'নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য। এর ফলে খালের ওপর নির্ভরশীল জীবন ও জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তাই রামপুরা খালের যথাযথ সংরক্ষণ এবং এর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে একটি উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রস্তাব করা হয়েছে— ঢাকা মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (২০১৬-৩৫)-ড্যাপে। এই পরিকল্পনার অধীনে তিনটি জোন শনাক্ত করা হয়েছে, যেমন- গবেষণা কেন্দ্র ও বোটানিক্যাল গার্ডেন, অ্যাম্ফিথিয়েটার এবং মাল্টিমোডাল টার্মিনাল। গবেষণা কেন্দ্র ও বোটানিক্যাল গার্ডেনের প্রকল্প এলাকাটি আফতাবনগরে অবস্থিত। উত্তর পাশে একটি খাল রয়েছে, যা এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। প্রকল্প এলাকায় ৩০ ফুট প্রশস্ত একটি সড়ক আছে, যেখানে পথচারীবান্ধব ফুটপাত স্থাপন করতে হবে। যেন পথচারীরা উদ্যানটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। বোটানিক্যাল গার্ডেনটির জন্য পলাশ, কামিনী, ডালিয়া, জারুল গাছ লাগানো হবে এবং মানুষ এই গাছগুলো সম্পর্কে জানতে পারে। প্রকল্পটির নান্দনিকতা বাড়ানো এবং মানুষের বসার ব্যবস্থা থাকবে। অন্যান্য প্রাকৃতিক দৃশ্যমান উপাদানও থাকবে।'
'অ্যাম্ফিথিয়েটার প্রকল্পটি পড়েছে একটি আবাসিক এলাকায়। স্থানীয়ভাবে এটি মেরাদিয়া হাট নামে পরিচিত। একসময় নরাই নদী দিয়ে নৌকার করে পণ্য আসতো এই হাটে। তবে নদীটি বর্তমানে শুকিয়ে খালে পরিণত হয়েছে। এখন ভ্যানে করে পণ্য পরিবহন করা হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বসার স্থান, দোকান ও উদ্যানের মতো উপাদানগুলো প্রস্তাবের
ড্যাপে রামপুরা খালের উন্নয়নে যে প্রস্তাবনা আছে
মূল উদ্দেশ্য। সাধারণ মানুষের বিনোদনের ব্যবস্থা, অবসর সময় কাটানো, মানসিক প্রশান্তির জন্য ব্যবস্থা করা হবে। হকারদের জন্য মনোনীত স্থান, নৌকা দিয়ে পণ্য আনার জন্য একটি ডেক, অ্যাম্ফিথিয়েটার, পথচারীবান্ধব সড়ক, প্লাজা, ফুডকোর্টের জন্য জালশেড এবং অন্যান্য সুবিধা ও স্থানটির সৌন্দর্যের জন্য একটি নকশা তৈরি করা হয়েছে।'
'টেকসই পরিবেশের কথা মাথায় রেখে এই নকশার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্প দুটি মৌলিক নীতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। হাটের ঐতিহ্য ধারণ করা এবং মানুষের আত্মিক উন্নতি সাধন, আঞ্চলিক, ঐতিহাসিক এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম ঐতিহ্যগত গ্রামের বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত। প্রকল্পের উপাদানের মধ্যে ভাসমান ডেক, খাবার জোন, সবুজ অঞ্চল (বাগান), গ্রামের বাজার, অ্যাম্ফিথিয়েটার, নৌকা অবতরণ স্টেশন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। মাল্টিমোডাল টার্মিনালের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে—শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে পরিবহন কার্যক্রমগুলো ধীরে ধীরে উত্তর ও পূর্বদিকে চলে যাচ্ছে। যোগাযোগের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সরকার ঢাকা মেট্রোরেল প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছে। এই পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় সাধনের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে এমআরটি লাইন-৫-এর একটি টার্মিনাল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, প্রকল্প এলাকার পাশে বালু নদ অবস্থিত। তাই এই স্থানটিতে একটি মাল্টিমোডাল টার্মিনালের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে বাস টার্মিনাল, নৌ-টার্মিনাল, এমআরটি স্টেশন এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুবিধার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।'
'এখানে বাসের আগমন জোন, বাস প্রস্থান জোন, নৌকা আগমন জোন, নৌকার প্রস্থান জোন, এমআরটি লাইন-৫-এর আগমন জোন ও প্রস্থান জোন, বাস পার্কিং এবং ল্যান্ডস্কেপের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান ২৪খবরবিডিকে বলেন, 'দখলে ও দূষণে মৃতপ্রায় খালটি নিয়ে সুন্দর একটি প্রস্তাবনা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা। এ খালটির কিছু অংশ উত্তর সিটি করপোরেশন ও কিছু দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন থাকায় তাদের উচিত হবে—সমন্বিতভাবে একটি উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং অতি দ্রুত এটি বাস্তবায়ন করা।'